স্বদেশ ডেস্ক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের ‘টাকা ভাগাভাগি’র অভিযোগ নিয়ে ছাত্রলীগ ও উপাচার্যের মধ্যে পাল্টাপাল্টি চ্যালেঞ্জ, অডিও ফাঁস ও ছাত্রলীগের দুই নেতার টাকা নেওয়ার স্বীকারোক্তির ঘটনায় ফেঁসে যেতে পারেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, সুষ্ঠু তদন্ত হলে উপাচার্য ও তার পরিবার দুর্নীতির অভিযোগে ফেঁসে যাবেন।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হলে গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়- উপাচার্যের মধ্যস্থতায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা ভাগাভাগি করে দেওয়া হয়। এরপর উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে আন্দোলনে নামেন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এরই মধ্যে গত শনিবার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ থেকে কয়েক শতাংশ চাঁদা দাবির অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে ছাত্রলীগ সভাপতি পদ থেকে রেজাওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে গোলাম রাব্বানীকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করে শোভন ও রাব্বানী বলে আসছেন, জাবির একটি টেন্ডারের ভাগ হিসেবে শাখা ছাত্রলীগকে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে জানতে পেরে তারা উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। ওই চাঁদাবাজির সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা ছিল না।
অন্যদিকে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেছেন, ‘তারা ঠিকাদারের কাছ থেকে কিছু শতাংশ (টাকা) নেওয়ার বিষয়ে আমাকে ইঙ্গিতও দিয়েছে। কিন্তু আমার কাছে এসে তারা হতাশ হয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠিতে এ বিষয়ে যা লিখেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
এরই মধ্যে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার ফোনালাপের যে অডিও ফাঁস হয়। যেখানে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম বলেছেন, ‘কে কত টাকা পাবে তা উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম তার বাসভবনে বৈঠক করে ঠিক করে দিয়েছেন।’
আরেক নেতা সহসভাপতি নিয়ামুল হক তাজও একই দাবি করেছেন। তারা দুজনেই দাবি করেন, শাখা সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে তারা নিজেরাও সে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং টাকার ভাগও পেয়েছেন। উপাচার্যের ছেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কমিশনের বাণিজ্য করেছেন এমনটাও দাবি করেন এই দুই নেতা। এ নিয়ে ত্রিমুখী বক্তব্য দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। নিজেরা টাকার ভাগ পেয়েছেন এমন কথা দুই নেতা স্বীকার করলেও শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি তা অস্বীকার করছেন।
টাকা দেওয়ার ঘটনা বরাবরের মতো অস্বীকার করছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ওরা ফোনালাপ করেছে আমাকে ও আমার পরিবারকে ফাঁসানোর জন্য। অনেক শিক্ষকও এর সাথে জড়িত। আমি তাদের নাম বলব না।’
তবে প্রকৃত ঘটনা তদন্তের ফলে বেরিয়ে আসুক এমনটাই বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যপন্থী শিক্ষক, ছাত্রলীগের একাংশ, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা ও সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ‘কেউ বলছে টাকা পেয়েছে। আবার কেউ অস্বীকার করছে। আসলে কারা টাকা পেয়েছে আর কারা টাকা পায়নি বা টাকা দেওয়া হয়েছে কি না এমন মিশ্র প্রতিক্রিয়ার অবসানের জন্য তদন্ত কমিটি হতে পারে। এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।’
এ বিষয়ে উপাচার্যপন্থী শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘আমরা মনে করি উপাচার্য এ ধরনের কাজের সাথে জড়িত না। তিনি চ্যালেঞ্জ পর্যন্ত করেছেন। সবাই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছে। আমরা এর অবসানের জন্য সুষ্ঠু তদন্ত হোক এমনটাই চাই।’
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘তদন্ত কমিটির ওপর ভরসা করা যায় না। সরকার যদি চায় বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তবে এক ধরনের তদন্ত হবে। আর যদি চায় আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে তবে অন্যরকম তদন্ত হবে। এ জন্য বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে এবং এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।’